ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে সম্প্রতি পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির ভিডিও প্রচার করা হয়। যেখানে দাবি করা হয় তিনি, ‘আবু সাঈদ মারা যায়নি, ফ্রান্সে আছে। ড. ইউনূস তাকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন। যা আদতে সত্য নয়।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান (ফ্যাক্ট চেক) রিউমর স্ক্যানার। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি ‘আবু সাঈদ মারা যায়নি, ফ্রান্সে আছে। ড. ইউনূস তাকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দিয়েছে’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং গোলাম মাওলা রনির ভিন্ন একটি মন্তব্যের ভিডিও ক্লিপের সাথে ‘আবু সাঈদ জীবিত গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেল Golam Maula Rony’ শীর্ষক বাক্য বসিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ডে গোলাম মাওলা রনির অস্পষ্ট ও খণ্ডিত কণ্ঠস্বর ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ভিডিওতে দাবিটির পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। মূলধারার গণমাধ্যম বা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রেও গোলাম মাওলা রনির এ ধরনের মন্তব্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, গোলাম মাওলা রনির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলেও আবু সাঈদকে নিয়ে এমন কোনো মন্তব্যের সন্ধান মেলেনি। বরং, গত ১৬ জুলাই তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে আবু সাঈদকে শহীদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একইভাবে টিভি উপস্থাপক তানভীর তারেকের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ আগস্ট ‘আমি শিওর শহীদ আবু সাঈদ খুব লাজুক প্রকৃতির ছিলেন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত গোলাম মাওলা রনির বক্তব্যের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও তিনি আবু সাঈদকে শহীদ উল্লেখ করে বক্তব্য প্রদান করেন।
অর্থাৎ, তিনি আবু সাঈদকে শহীদ হিসেবে উল্লেখ করার ফলে এটা স্পষ্ট যে, আবু সাঈদের জীবিত থাকা বা ফ্রান্সে অবস্থান করার বিষয়ে ড. ইউনূসকে জড়িয়ে গোলাম মাওলা রনির নামে প্রচারিত মন্তব্যটি সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন।
আবু সাঈদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রদত্ত মৃত্যুর প্রমাণপত্র অনুযায়ী আবু সাঈদকে ১৬ জুলাই দুপুর ৩.০৫ মিনিটে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ১৭ জুলাই সকালে রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আবু সাঈদকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সুতরাং, আবু সাঈদের জীবিত থাকা ও ফ্রান্সে অবস্থান করার বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে গোলাম মাওলা রনির নামে টিকটকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সুূুত্রঃ চ্যানেল 24